ইতিমধ্যে পৃথিবীর শতাধিক দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত হয়ে বহু রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
বিভিন্ন ভাইরাস ও রোগব্যাধি কিছুদিন পরপর জানান দেয়, আমরা সাইন্স এবং টেকনলজিতে যতই উন্নতির শীর্ষে পৌঁছে যাই না কেন, মহান আল্লাহর করুণা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।
এমতাবস্থায় আমাদের উচিত ছোট-বড় সব ধরনের পাপ থেকে আল্লাহর কাছে ফিরে আসা করা; কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। কারণ পাপের জন্যই বিভিন্ন আজাব ও মহামারী নেমে আসে বলে হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে–.নবীজী (সা.) বলেন,
‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ও মহামারী ব্যাপক আকার ধারণ করে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিল না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০১৯).
সবার উচিত মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। অশ্লীলতা থেকে বিরত ও সর্বদা পবিত্র-পরিচ্ছন্ন থাকা।..যদিও এই রোগটিকে ছোঁয়াচে বলা হচ্ছে কিন্তু ছোঁয়াচে রোগ বা রোগের সংক্রমণ নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে। আমরা বাস্তবেও দেখতে পাই যে, রোগীর কাছে, বা চারপাশে থেকেও অনেক মানুষ সুস্থ রয়েছেন।আবার অনেক সতর্কতার পরেও মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন রোগে। বস্তুত শুধু রোগজীবাণুর সংক্রমনেই যদি রোগ হতো তাহলে আমরা সকলেই অসুস্থ হয়ে যেতাম; কারণ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রকারের রোগজীবাণু আমাদের দেহে প্রবেশ করছে।.রোগজীবাণুর পাশাপাশি মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, রোগ জীবাণুর কর্মক্ষমতা ইত্যাদি অনেক কিছুর সমন্বয়ে মানুষের দেহে রোগের প্রকাশ ঘটে। যদিও কলেরা, প্লেগ, গুটি বসন্ত, যক্ষ্মা, ডায়রিরা, এইডস, বার্ড ফ্লু ইত্যাদি রোগ গুলো যখন সর্ব প্রথম দেখা দিয়েছিল তা মারাত্মক মহামারী আকার ধারন করেছিল এবং ঐ রোগ গুলোকে প্রাথমিক ভাবে ছোঁয়াচে ধরা হলেও পরবর্তীতে দেখা গিয়েছে যে এগুলো আসলে ছোঁয়াচে নয়।
আবূ হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বললেন, সংক্রমন বলতে কিছু নেই। তখন এক বেদুঈন বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার উটগুলো হরিনীর ন্যায় সুস্থ থাকে। এরপর একটি চর্মরোগে আক্রান্ত উট এগুলোর মধ্যে প্রবেশ করার পরে অন্যান্য উটও আক্রান্ত হয়ে যায়।তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বলেন, তাহলে প্রথম উটটিকে কে সংক্রমিত করল? (বুখারী, আস-সহীহ ৫/২১৬১, ২১৭৭; মুসলিম, আস-সহীহ ৪/১৭৪২।
তাই এটিকে তাক্বদীরের অন্তর্ভুক্ত ধরে নিয়ে হবে। এই নিয়ে খুব আতঙ্কিত হয়ে অস্থির হওয়া যাবেনা আবার একেবারে উদাসীনও হওয়া যাবে না।
মহামারী দেখা দিলে করণীয়ঃ====================
মহানবী (সা.) বলেন, ‘কোথাও মহামারী দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা ছেড়ে চলে এসো না। আবার কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে সে জায়গায় গমন করো না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১০৬৫)
একটি বর্ণনায় দেখা গেছে,
সিরিয়ায় মহামারী দেখা দিলে ওমর (রা.) তার গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সফর স্থগিত করেন। (বুখারি: ৫৭২৯).
তাই যেখানে মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে, সেখানে গমন করা উচিত নয় এবং আমার এলাকায় মহামারী দেখা দিলে আমার জন্যও সেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র যাওয়া উচিত নয়। মুমিন ঈমান ও ইখলাসের সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করবে।এভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) প্রায় দেড় হাজার বৎসর পূর্বে সংক্রমন প্রতিরোধে বিচ্ছিন্নকরণ (quarantine) ব্যবস্থার নির্দেশনা প্রদান করেন।মুমিন বিশ্বাস করেন যে, সকল বিষয়ের ন্যায় রোগের ক্ষেত্রেও আল্লাহর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এজন্য সংক্রমনের ভয়ে অস্থির বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই।পাশাপাশি যে সব রোগের বিস্তারে সংক্রমন একটি উপায় বলে নিশ্চিত জানা যায় সে সকল রোগের বিস্তার রোধের ও সংক্রমন নিয়ন্ত্রনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মহামারীতে মৃত মু’মিন ব্যক্তির মর্যাদাঃ=====================
যদি আমাদের রব আমাদের আমাদের মৃত্যু লিখেই থাকেন তাহলেও আমরা আমাদের রবের উপর সন্তুষ্ট থাকবো, শহীদের মর্যাদার আশা রাখবো এবং জান্নাতের আশা রাখবো ইশাআল্লাহ্।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন- মহামারী হল আযাব, এটি আল্লাহ্ যার কাছে ইচ্ছা পাঠিয়ে থাকেন কিন্তু মুনিনদের জন্য এটি রহমত। (সহিহ বুখারী).
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘মহামারীর কারণে মারা যাওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত।’ (বুখারি)
মহামারী থেকে বাঁচার দোয়াঃ====================
হাদিসে রাসুল (সা.) মহামারী জন্য একটি দুয়া শিখিয়েছেন-‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাস, ওয়াল জুনু-ন, ওয়াল জুজাম, ওয়া মিন সাইয়িইল আসকাম।’অর্থ : হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কুষ্ঠরোগ, মস্তিষ্কের বিকৃতি ও সব ধরনের দুরারোগ্য থেকে মুক্তি চাচ্ছি।’ (আদু দাউদ, হাদিস : ৫৪৯৩)